যদি ভাবো ভালো আছি- তবে তাই!
যেন চেনা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে
কোন এক নির্জন দ্বীপে একলা আমি
বুকের ভেতর প্রেমের চিতায় পুড়ছে স্মৃতি
ছাই হয়ে গেছে স্বপ্ন গুলো,
তবু যদি ভাবো ভালো আছি- তবে তাই!
আজও চায়ের কাপটা পড়ে আছে
শুধু ধুয়ে গেছে তোমার ঠোটের ছোঁয়া,
আমার স্বপ্ন গুলো ধুমকেতুর মত উধাও
ঝরে গেছে আকাশের বুক থেকে!
তারাদের নিঃশব্দ খেলায় আজো তোমায় খুঁজি
ফাঁকা বারান্দায় জোনাকির আলোয়
তোমার জন্য অন্তহীন অপেক্ষা -
জানি তুমি আসবে না কোনোদিন!
তবু যদি ভাবো ভালো আছি- তবে তাই!
এতো ব্যাস্ততার ভীড়ে নিস্তব্ধ আমি
থেমে গেছে জীবনের সব গতি
কুয়াশায় ঢাকা জিবনের লক্ষ্য
আছড়ে পড়ছে নিষ্ঠুর পাথরে!
ঘুমের চোখে লেখা আছে তোমার নাম
মরুভূমির মতো শুন্য বুকে
মনহীন প্রানটা পড়ে আছে একা,
এ যদি ভালো থাকা হয়!
তাহলে তোমার ঈশ্বরকে বলো
এ জীবন যেন কাউকে না দেয়!
তোমার ইশ্বর আমাকে দেয়নি কিছুই
ব্যার্থতার আকাশে উড়ছে পতাকা
এই পৃথিবীর এক কোনে আমি একা
প্রেমহীন প্রাণহীন জীবনের রঙটা ধুসর-
সাদা কালো রামধনুতে আঁকা তোমার ছবি,
অপবাদের পাষাণ প্রাচীর চেপে ধরেছে শ্বাস
প্রান পাখীটা খুঁজছে মুক্তির ঠিকানা-
তাও যদি বল ভালো আছি- তবে তাই!
আর একটা নতুন সকাল
দূরের আকাশটা একটু লালচে
গাছের ডালে ডালে পাখীদের কিচিমিচি
তখনো এলার্মটা বাজেনি
ঘুম ভেঙে গেছে
আধখোলা চোখে আকাশটা দেখছি-
মায়ের সেই পুরানো অভ্যেস
পুজার জন্য বাগানে সাদা ফুল তোলা
আর গুন গুন ক'রে রবি ঠাকুর।
হঠাৎ ই একটা কাকের কর্কশ আওয়াজে
ভেঙে গেল সুন্দর দিবা স্বপ্নটা!
মা কাক টাকে তাড়াচ্ছে-
কিছুক্ষন পর মা বলল-
"কিরে এবার উঠবি তো?
তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না
আজ ইনটারভিউ অথচ কোন হুস নেই
পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস,
পারিস ও বটে!"
আমি আলিস্যি নিয়ে বললাম -
হুমম! এই উঠব এবার।
সকাল মানেই আবার শুরু
বেকারত্বের সংগ্রাম
সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে
ছিনিয়ে নাও অধিকার
না হলে তুমি বাঁচবে না!
কি সুন্দর এই জীবন
কি যে তার দর্শন-
কিছুই বুঝি না,
স্কুলের শিক্ষা, মহাপুরুষের বাণী
আর জীবনের আদর্শ
বাস্তবের গলিতে এসে
কেমন যেন মিথ্যে হয়ে যায়।
মা তখন পূজায় ব্যস্ত-
ছেলেটা মন্দিরের সামনে মাকে
করল প্রনাম-
যেন যুদ্ধ জয়ের অনুমতি!
মা বলল-
আরে চললি কোথায়?
খেয়ে যা কিছু!
সময় নেই রাস্তায় খেয়ে নেব,
মা আসছি!
দুগগা! দুগগা!
সাবধানে যাস, আর তারাতারি ফিরিস!
ব্যস্ত শহরে বাসে ঝুলছে বাদুড়
কচ্চপ আর খড়গোসের দৌড়ে
এতটুকু মাটি কেউ ছাড়তে চায় না!
হাজারো শব্দের তান্ডব
যেন নৃত্য করছে কানে!
ছেলেটা জানালার ফাঁক দিয়ে
ছুটে যাওয়া গাছ গুলোর সাথে
হয়তো নিজেকে মেলাছিল-
যেন বেকার সমাজ এই ভাবেই ছুটছে
একটা চাকরির খোঁজে।
বাসে তখন বড্ড ভিড় জমেছে
পা ফেলার জায়গা নেই
সামনে এসে দাঁড়ালো এক ভদ্র মহিলা
কি মনে করে ছেলেটা সিট টা ছেড়ে দিল,
বিনিময়ে হাসিমুখে ধন্যবাদের আদান প্রদান।
অবশেষে এল রেল ষ্টেশন
এখনো এক ঘন্টার পথ বাকি
অফিস টাইম
হাজার হাজার মানুষের ভিড়
কিন্তু ট্রেন এর দেখা নেই!
অনেকক্ষণ পর একটা ট্রেন এল
কেউ কেউ বলল-
ওরে উঠিস না ফাইন হবে,
কেউ আবার বিরক্ত
কারন ওটা শুধু মেয়েদের জন্য।
সময়ে না যেতে পারলে
আবার একটা সুযোগ মিস
তাই কিছু না ভেবে ছেলেটা উঠল ট্রেনে
ভেতরে শুধু মেয়েদের ভিড়
অনেক জায়গা খালিও ছিল বসার জন্য
ছেলেটা দাঁড়াল দরজার সামনে
বাইরের দিকে মুখ করে,
বাঁশি বাজল-
স্বপ্নটা যেন সত্যি হবার অপেক্ষায়!
যুদ্ধের ঘোড়াটা ছুটল তীরবেগে
সব কিছুকে পিছে ফেলে,
সে যেন এক যুদ্ধজয়ের সৈনিক!
"হঠাৎ ই কানে এল
কিছু কথা
যেন মনে হল আমাকেই বলছে"
ছেলেটা ঘুরে তাকালো-
কেউ চিৎকার করছে আঙুল তুলে
"এখুনি নেমে যাও,
জানোয়ার গুলো মানুষ হবে না।
ঘরে মা বোন নেই!
কারো মুখে বিদ্রুপ-
কুকুরের লেজ এমনি কি আর সোজা হবে!
কেমন বজ্জাত ছেলে দেখ
কথা গুলো কি কানে যাচ্ছে!
কেউ বলল-
মুখে কিছু হবে না
ফেলে দাও ট্রেন থেকে।"
ছেলেটা ভাবল ভুল হয়ে গেছে
পরের স্টেশনে নেমে যাবে!
সে সময় আর আসেনি-
কিল চড় গালি গালাজ
কেউ চুলের মুটি ধরে টানছে
কেউ বা মারছে লাথি,
অসহায় ছেলেটা-
ফাইলটাকে যুদ্ধের ঢাল করে বাঁচার চেষ্টায়!
কেউ কথা শোনেনি তার,
অবশেষে
রক্তে ভেজা স্বপ্নটা ডুবে গেল
হাসপাতালের বেডে!
*****************************
ভেবেছিলাম তুই গাছ হবি
আর আমি তার ছায়া
কিংবা পাখী হয়ে বাসা বাধবো ডালে-
কিন্তু কখন যে মাটি হয়ে গেছি!
তোর স্মৃতির শিকড় গুলো অক্টোপাশের মত
আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে
একটু একটু করে শোষণ করছে!
ভেবেছিলাম তুই শান্ত নদী হবি
আর আমি তার মাঝি-
জোসনা রাতে আলতো আদরে
দাঁড় বেয়ে যাবো তোর বুকে!
কিন্তু কেন যে তুই উত্তাল তরঙ্গ হলি-
ছিঁড়ে গেল পাল
ভাঙা দাঁড় নিয়ে মাঝপথে দিশাহীন,
নৌকা ডুবির অপেক্ষায়-
শহরের কালো ধূলি মাখা পথে শুধু আমি ছাড়া সবাই ব্যাস্ত ওরা আমাকে ফেলে ছুটে যায় শুধু আমি পারি না! ফুটন্ত চায়ের কেটলির ধোঁয়ায় খুঁজতে থাকি তোকে- এক দৃষ্টিতে ভাবি- আলাদিনের জিনের মত যদি একবার সত্যি সামনে এসে দাঁড়াতিস!
কথা ছিল তোর পক্ষীরাজে চড়াবি, শহরের সীমান্ত ছাড়িয়ে অনেক দূর- রামধনুর দেশে মেলে দেবো ডানা স্বপ্নের রেনু গুলো গায়ে মেখে শুধু একবার ছুঁয়ে দেবো তোকে!
কথা ছিল জীবনের শেষ বসন্তে দুনে মেলাবো হাত ভালোবাসার বর্ষায় ভিজে গেছে সব তারপর একদিন হালকা শীতের উষ্ণতা আরও কাছে এনেছিল তোকে, শরত এল, ফুল ফুটল- কিন্তু কি জানি কার অভিশাপে অসময়ে ঝরে গেল সব বসন্ত এল শুধু তুই এলি না!
------------------------------একলা পথিক
আর একটা তুমি পৃথিবী দাও যেখানে আমি একা, দুই পৃথিবীর মিলন স্থলে একফালি চাঁদ বাঁকা, আর দিও এক শান্ত নদী কভু সেখানে হারাই যদি স্মৃতির সাগরে, একটি কোকিল পাঠিয়ে দিও তীরের কিনারে। গানে গানে উঠুক ভরে, ভগ্ন বীণার ছিন্ন তারে ভাসুক স্মৃতির ভেলা, আর আমারে খেলিও না তুমি মিথ্যা প্রেমের খেলা। সবুজ ঘাসে যখন বসে ভাববো তোমার কথা তোমার শরৎ ঝরিয়ে দেবে একটি শুকনো পাতা । এই পৃথিবীতে ছিলেম যখন আমার ছিলে তুমি, নতুন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিও ক্যাকটাস মরুভূমি । চলতে চলতে ফুরিয়ে পথ করেছিলে কতো মিথ্যা শপত, মিথ্যারই হল জয়- প্রেম যে আজ ভাঙ্গার খেলা ভাবতেই ভয় হয়।।